ঢাকাThursday , 12 June 2025
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন বিচার
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. গণমাধ্যম
  8. জনপ্রিয় সংবাদ
  9. জাতীয়
  10. ফটো গ্যালারি
  11. বিনোদন
  12. ভি‌ডিও
  13. ভিডিও গ্যালারি
  14. রাজধানী
  15. রাজনীতি
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জীবন নয়, চলে গেল তারা: বাঞ্ছারামপুরে আত্মহননের করুণ পরিসংখ্যান

admin
June 12, 2025 9:11 am
Link Copied!

……………………………………সোহাইল আহমেদ

অভিমান, প্রেম, পড়াশোনার চাপ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও মানসিক অস্থিতায় গত দুই মা‌সে ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বাঞ্ছারামপু‌রে ভুগে গেল ১৭ জন। আত্মহননের পথে হেঁটেছেন তারা। এর মধ্যে ৪৬.১ শতাংশই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী। ছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি, এ হার ৬১ শতাংশ। বিশ্লেষকরা মনে করেন, অনিয়ন্ত্রিত আবেগ ও তুলনামূলক দুর্বল মানসিক স্থিতিশীলতার কারণে মেয়ে শিক্ষার্থীরা সহজে হতাশায় ডুবে এ পথে পা বাড়াচ্ছে।

২০২৪ সালে দেশে আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের করা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

পারিবারিক চাপ, সমাজের প্রত্যাশা, কর্মজীবনের অনিশ্চয়তা ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত করে তুলছে। প্রতিটি আত্মহনন শুধু একটি পরিবার বা শিক্ষাঙ্গনের জন্য শোকের কারণ হলেও এটি শিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বড় ধরনের ফাঁকফোকরকে ইঙ্গিত করে।

২০২৩ সালে ৫১৩ আর ২০২২ সালে আত্মহত্যা করে ৫৩২ শিক্ষার্থী। সে তুলনায় গেল বছর আত্মহননের ঘটনা কম ঘটার তথ্য মিলেছে। এ ব্যাপারে আঁচল ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী সদস্য ফারজানা আক্তার লাবনী বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আত্মহত্যার সংবাদ গণমাধ্যমে কম এসেছে বলে আমাদের গবেষকরা মনে করছেন।
জরিপে দেখা গেছে, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ ছেলে। তৃতীয় লিঙ্গ ও ট্রান্সজেন্ডার দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ছিল স্কুলগামীদের মধ্যে, এ হার ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ। কলেজ পর্যায়ে ২৩ দশমিক ২ শতাংশ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১৭ দশমিক ৭৪ এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৪৭ দশমিক ৬ এবং ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী ৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

আর শিক্ষার স্তর অনুযায়ী, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীর মধ্যে ছিল মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ১৯ দশমিক ৪ ও স্নাতক পর্যায়ের ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১ দশমিক ৯, ডিপ্লোমা পর্যায়ের শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং সদ্য পড়ালেখা শেষ করা বেকার দশমিক ৬ শতাংশ।

জরিপ অনুযায়ী, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী, ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ। পরে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী, ২৪ শতাংশ। আর আত্মহত্যা করা মোট শিক্ষার্থীর ৭ দশমিক ৪ শতাংশের বয়স ১ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ।
আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ বলছে, গত বছর ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি, ২৯ শতাংশ আত্মহত্যা করেছে। খুলনায় ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৮, রাজশাহী ও বরিশালে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ করে, রংপুরে ৭ দশমিক ৭, ময়মনসিংহে ৫ দশমিক ৫ ও সিলেট বিভাগে ২ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার করেছে।

সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি বলেছে, ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমানে, এ হার ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে ৩৯ দশমিক ১ এবং উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। প্রেমের কারণে আত্মহত্যা করেছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাধ্যমিকে ৩৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ, কলেজ পর্যায়ে ৩৮ দশমিক ৪৬, উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে ২১ দশমিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পড়ালেখার চাপে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ছিল স্কুল পর্যায়ে ৫৯ দশমিক ০৯ শতাংশ, কলেজ পর্যায়ে ২৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। আর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে মানসিক অস্থিরতার কারণে।

বাঞ্ছারামপুর ম‌ডেল থানার অ‌ফিসার ইনচার্জ মোর‌শেদুল আলম চৌধুরী ব‌লেন সফলতা উদ্‌যাপন করা হলেও ব্যর্থতাকে সামাল দেওয়ার বিষয়টি সমাজে শেখানো হয় না। তিনি সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নজর দিতে অভিভাবকদের আহ্বান জানান।

তি‌নি আরও ব‌লেন, “একটা পরিবার একটা বটগাছের মতো। সেই গাছের একটি ডাল ভেঙে গেলে যেমন পুরো গাছে তার প্রভাব পড়ে, তেমনি পরিবারের একজন হারিয়ে গেলে পুরো পরিবারই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এটা শুধু ব্যক্তিগত নয়, সামগ্রিক এক শোক ও চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”

“আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, তিনিই একমাত্র নেওয়ার অধিকার রাখেন। মানুষ নিজে নিজেকে নেওয়ার অধিকার পায় না। তাই জীবনকে ভালোবাসতে হবে, কষ্টের সময় ধৈর্য ধরতে হবে—কারণ প্রতিটি জীবনই অমূল্য।” হতাশা ও বিষণ্নতার অশুভ চক্র থেকে বের হতে না পেরে তারা বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। আত্মহত্যা হলো ইচ্ছা করে নিজের জীবন শেষ করার একটি চূড়ান্ত পদক্ষেপ। মানুষের মানসিক যন্ত্রণা, হতাশা এবং অসহায়ত্বের এক মারাত্মক বহিঃপ্রকাশ এটি।

বাঞ্ছারামপুর উপ‌জেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মো: শরিফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে ধারণা কম। বিষয়টি নিয়ে তারা সচেতনও নয়। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ বলেন, শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী করা জরুরি। একজন শিক্ষার্থী যেন তাঁর মনের কথা খুলে বলার জায়গা পান। তিনি যেন নিজেকে বঞ্চিত ও বিচ্ছিন্ন মনে না করেন। পড়াশোনার বাইরে শিক্ষার্থীর ইতিবাচক নানা কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের মধ্যে এই বার্তা ছড়াতে হবে যে জীবন মূল্যবান এবং জীবন একটাই।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে আঁচল ফাউন্ডেশনের বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে। সেগুলো হলো মানসিক স্বাস্থ্য অ্যাম্বাসাডর প্রোগ্রাম, বন্ধু সহযোগিতা গ্রুপ, লাইফ স্কিলস ওয়ার্কশপ, গেমিফিকেশন টেকনিক, ফিলিংস অ্যালার্ম সিস্টেম চালু, পারিবারিক কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম, সৃজনশীল থেরাপি ক্লাস এবং ডিজিটাল মেন্টাল হেলথ ক্যাম্পেইন

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।