সোহাইল আহমেদ || মূল ফি ২০০-৫০০ টাকা, ৬ নং ছয়ফুল্লাকান্দির সাবেক ইউপি সচিব দবিরের দুর্নীতির রাজত্ব — এলাকাবাসীর ক্ষোভ, গ্রেপ্তারের দাবি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ৬ নং ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সচিব দবির হোসেনের বিরুদ্ধে কোটি টাকার দুর্নীতি, ট্রেড লাইসেন্স ও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি দায়িত্বে থেকে দুর্নীতির রেকর্ড গড়ে এলাকায় চরম ক্ষোভের জন্ম দিয়েছেন এই সরকারি কর্মকর্তা দবির। স্থানীয়দের অভিযোগ, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স ও সনদ সংশোধনের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন দবির হোসেন। শুধু তাই নয় — একাধিক নারীর সংসার ভাঙার ঘটনাও এলাকাবাসীর মুখে মুখে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রায় ৪ বছর ৬ নং ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদে সচিব পদে দায়িত্ব পালন করেছেন দবির হোসেন। বর্তমানে তিনি ৮ নং আইয়ুবপুর ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত। দায়িত্ব পালনকালে সাধারণ মানুষের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন এবং ট্রেড লাইসেন্স করতে গিয়ে হয়রানি ও অর্থ লুটের শিকার হতে হয়েছে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, জন্ম নিবন্ধন ফি ২৫-৫০ টাকা এবং সংশোধনের ফি ১০০ টাকা হলেও, দবির হোসেনের টেবিলে এই ফি হয়ে যেত হাজার হাজার টাকা।
ছয়ফুল্লাকান্দি বাজার ব্যবসায়ী শাহ আলম জানান, “প্রবাসী ভাইয়ের লাশ আনতে মৃত্যু সনদ দরকার হয়। দবির ৪ লাখ টাকা দাবি করে। শেষ পর্যন্ত ২ লাখ টাকা দিয়ে সনদ নিতে হয়েছে।”
একই বাজারে ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম জানান, “২০০-৫০০ টাকার ট্রেড লাইসেন্স করাতে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।” নবায়নের জন্য ১০০-৩০০ টাকা হলেও আদায় করা হয়েছে ৩ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
আরেক ভুক্তভোগী বলেন, “জন্ম নিবন্ধন সংশোধনে ১০০ টাকা লাগার কথা। অথচ ৬ হাজার টাকা নেয়। প্রতিবাদ করলে ভয়ভীতি দেখায়।”
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম তুষারের মদদেই এই দুর্নীতির মহোৎসব চলত।
শুধু দুর্নীতিই নয় — দবির হোসেনের বিরুদ্ধে একাধিক নারীর সংসার ভাঙার ভয়াবহ অভিযোগও পাওয়া গেছে। সরল-সহজ নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের সংসার ভাঙার ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবি, দুর্নীতিবাজ দবির হোসেনকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হোক। কোটি টাকার সনদ বাণিজ্যের তদন্ত করে লুটে নেওয়া টাকা উদ্ধার এবং ভুক্তভোগী নারীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক।
ইউপি সচিব দবির হোসেন বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমাকে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে হেয় করার জন্য একটি মহল এসব ষড়যন্ত্র করছে।
এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস আরা বলেন, “বিষয়টি জানলাম। দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”